বিস্তারিত বিবরণ
পাটের রোগ এবং পোকা ব্যবস্থাপনা / Jute: Major Disease, pests and their management
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী, নদীয়া, হাওড়া, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, সহ উত্তরের মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে পাট চাষ হয়। আজও ভারতের অধিকাংশ চাষী গতানুগতিক পদ্ধতিতেই পাট চাষ করেন।পাটকে সোনার আঁশ বলা হয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফসল পাট। পাট তন্তু জাতীয় উদ্ভিদ। পাটগাছের ছাল থেকে পাটের আঁশ সংগ্রহ করা হয়।পাট থেকে বিভিন্ন প্রকার পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন হয়ে থাকে। যেমন- সুতা, থলি, চট, দড়ি, সুতলি।
পাটের গোড়া পচা রোগ :
যে সব দেশী পাটের ক্ষেতে জল নিষ্কাশন করা যায় না, সে সব ক্ষেতের পাট গাছের গোড়ায় সাদা তুলার আঁশের মত এক প্রকার ছত্রাক রাতারাতি বেড়ে উঠে।কয়েকদিন পর সরিষার দানার মত বাদামী রংয়ের জীবাণুর দানা দেখা যায়।এ রোগের ফলে গাছের গোড়া পচে যায় এবং গাছ ভেঙ্গে পড়ে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। জমিতে এ রোগ দেখা দিলে গাছ কেটে আঁশ সংগ্রহ করা উচিত। দেশী ও তোষা উভয় পাটেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
পাট কাটার পর গাছের গোড়া, শিকড় ও অন্যান্য পরিত্যাক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।ক্ষেতের আশ-পাশ অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না। এ রোগের প্রতিকারের জন্য জমি পরিষ্কার পরিছন্ন এবং আর্বজনামুক্ত রাখতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :
জল নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্ত গাছের গোড়ায় স্প্রে করুন ,কার্বেন্ডাজিম ১২% + ম্যানকোজেব ৬৩% (৭৫% WP) ২.৫গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন। ব্যবহার করুন (দেহাত - Saabu ) অথবা স্প্রে করুন গাছের গোড়ায় স্প্রে করুন কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% WP ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন অথবা স্প্রে করুন থিওফানেট মিথাইল ৭০% WP ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
পাটের ঢলে পড়া রোগ :
এ রোগের আক্রমণে সম্পূর্ণ গাছ ক্রমেই ঢলে পড়ে।গাছের গোড়ায় বাদামী রঙের দাগ পড়ে। ফুল আসার সময় পাট প্রায়ই এ রোগে মারা যায়। দেশী পাটে এ রোগ কম দেখা যায়।
আক্রান্ত দেখা মাত্র তুলে ফেলে দিন । জমিতে জল জমতে না দেওয়া । রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :
সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা। বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করা, কার্বেন্ডাজিম ৫০% WP ২ গ্রাম কেজি বীজ। স্প্রে করুন কাসুগামাইসিন ৫% + কপার অক্সাইক্লোরাইড ৪৫% WP ১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন। ব্যবহার করুন ( ধানুকা - কনিকা )
পাটের কান্ড পচা রোগ :
চারা অবস্থায় কান্ডের উপর গাঢ় বাদামী রঙের দাগ পড়ে। দাগ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে। কান্ড দূর্বল হয়।
আক্রান্ত স্থান থেকে গাছ ভেঙ্গে পড়ে। কখনও কান্ড পচে গাছ মারা যায়। বীজ গজানোর সময় ছত্রাকের আক্রমণে বীজ পচে যায় এবং গাছ মাটির উপরে আসার আগেই মারা যায়। আক্রান্ত দেখা মাত্র তুলে ফেলা দরকার । সুস্থ ও রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ। সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :
বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করা, বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করা, কার্বেন্ডাজিম ৫০% WP ২ গ্রাম কেজি বীজ।। আক্রমণ বেশী হলে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করুন ,কার্বেন্ডাজিম ১২% + ম্যানকোজেব ৬৩% (৭৫% WP) ২.৫গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন। ব্যবহার করুন (দেহাত - Saabu )
অ্যানথ্রাকনোজ রোগের কারণে ক্ষতি:
এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের কারণে গাছের সব অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনিয়মিত আকৃতির রিংগুলি হলুদ প্রান্ত দিয়ে ঘেরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দেখা যায়। সময়ের সাথে সাথে, এই দাগগুলি গাঢ় রঙে পরিণত হয় – গাঢ় বাদামী থেকে কালো।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :
এই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি একর জমিতে ৩০০ মিলি অ্যাজোক্সিস্ট্রবিন 11% + টেবুকোনাজল 18.3% এসসি প্রয়োগ করুন। ব্যবহার করুন (দেহাত -Azytop )
এছাড়া প্রতি একর জমিতে ৩০০-৭০০ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম 12% WP + Mancozeb 63% WP (দেহাত -Saabu ,UPL- Saaf, Dhanuka- Sixer) ব্যবহার করুন।
মাকড় :
পাটক্ষেতে দুই ধরনের মাকড় দেখা যায়। যথা- হলদে ও লাল মাকড়।
হলদে মাকড় কচি পাতায় আক্রমণ করে পাতার রস চুষে খায়। এতে কচি পাতাগুলো নীচের কুঁকড়ে যায় এবং পাতার রং তামাটে হয়ে যায়। হলদে মাকড় ফুলের কুঁড়িকেও আক্রমণ করে। ফলে কুঁড়ি ফুটতে পারে না। ফুলের পাপড়ির রং হলদে থেকে কালচে রঙের হয়ে যায় ও ঝরে পড়ে। এতে বীজের ফলনও কমে যায়। একটানা খরা বা অনাবৃষ্টির সময় এদের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। লাল মাকড় একটু নিচের পাতা আক্রমণ করে।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :
প্রচুর পরিমান বৃষ্টিপাত হলে প্রাকৃতিক ভাবে এই পোকা দমন হয়। আক্রমণ বেশি হলে স্প্রে করুন স্পাইরোমেসিফেন ২২.৯% SC ১ML প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন। ব্যবহার করুন ( বায়ার - ওবেরোন )
পাটের মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা
এ পোকা দেখতে গোল এবং হালকা গোলাপী রংয়ের, পোকাগুলো একসাথে থাকে ও এদের উপরিভাগ সাদা তুলার মতো গুড়া দ্বারা আবৃত থাকে। ছাতরা পোকা গাছের ডগায় দল বেঁধে বাস করে এবং কচি ডগা ও পাতার রস চুষে খায়। ফলে কচি ডগা ও পাতাগুলো কুঁকড়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থান ফুলে উঠে। কোঁকড়ানো পাতাগুলো ঝড়ে যায় ও আক্রান্ত স্থান হতে শাখা-প্রশাখা বের হয়। এতে গাছ লম্বায় বাড়ে না ও আক্রান্ত স্থান ভাল করে পঁচে না। পোকার আক্রমণের দরুন ফলন খুবই কম হয় এবং আঁশ নিম্নমানের হয়। বীজ ফসলে আক্রমণ হলে বীজের ফলন খুব কম হয়।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :
এটি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রথমে পরিষ্কার জল দিয়ে আক্রান্ত জায়গা ভালো ভাবে ধুয়ে দিন তার ১ ঘন্টা পর বুপ্রোফেজইন ২৫%এস সি ১ এম এল প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন । ব্যবহার করুন ( টাটা রালিস -আপ্পলাউড)
পাটের লেদা পোকা :
এক সাথে অনেক পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে । ফলে পাতা জালের মত হয়ে যায়। বড় পোকা পাতায় বড় বড় ছিদ্র করেও ক্ষতি সাধন করে । কচি ও বয়স্ক সব পাতাই খেয়ে ফেলে। স্ত্রী মথ পাটের পাতার উল্টা পিঠে গাদা করে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর প্রায় ৬-৭ দিন পর্যন্ত বাচ্চাগুলো পাতার উল্টা দিকে দলবদ্ধভাবে থাকে। পরে এরা সব গাছে ছড়িয়ে পড়ে। দল বদ্ধভাবে থাকা অবস্থায় কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে সাদা পাতলা পর্দার মতো করে ফেলে এবং আক্রান্ত পাতাগুলো দূর থেকেই সহজে দৃশ্যমান হয়। আক্রমণ ব্যাপক হলে এরা কচি ডগাও খেয়ে ঢেলে।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :
পাটের পাতায় ডিমের গাদা দেখলে ডিম সহ পাতা তুলে জমির বাইরে করতে হবে। আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে যখন ডিম থেকে বের হওয়া কীড়াগুলো দলবদ্ধভাবে থাকে, তখন পোকাসহ পাতাটি তুলে জমির বাইরে ফেলে দিন। এই পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যইমামেকটিন বেনজোয়েট ৫% এসজি ১ গ্রাম প্রতি ২ লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন । ব্যবহার করুন (দেহাত - ইলিগো, ধানুকা - ই.এম. 1) অথবা ক্লোরপিরিফস ৫০% + সাইপারমেথ্রিন ৫% (৫৫% ইসি) ১.৫ML প্রতি লিটার জলে লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।ব্যবহার করুন (দেহাত - C Square )
. কোন রোগ বা পোকা আপনার পাট ফসলকে ক্ষতি করার সম্ভাবনা বেশি? মন্তব্যের মাধ্যমে আপনার উত্তর আমাদের বলুন. কৃষি সম্পর্কিত তথ্যের জন্য, আপনি দেহাত টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০-১০৩৬-১১ ০-এ যোগাযোগ করে বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। এছাড়াও, 'কিসান ডাক্তার' চ্যানেল অনুসরণ করে আপনি ফসলের সঠিক যত্ন এবং সুরক্ষার জন্য আরও তথ্য পেতে পারেন। এর সাথে, এই পোস্টটি লাইক এবং শেয়ার করে, আপনি এই তথ্যটি অন্য কৃষকদের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারেন।
সচরাচর কিছু জিজ্ঞাস্য | Frequently Asked Question
Q: পাটের কান্ড পচা রোগের লক্ষণ কী ?
A: চারা অবস্থায় কান্ডের উপর গাঢ় বাদামী রঙের দাগ পড়ে। দাগ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে। কান্ড দূর্বল হয়।আক্রান্ত স্থান থেকে গাছ ভেঙ্গে পড়ে। কখনও কান্ড পচে গাছ মারা যায়। বীজ গজানোর সময় ছত্রাকের আক্রমণে বীজ পচে যায় এবং গাছ মাটির উপরে আসার আগেই মারা যায়।
Q: পাটের মাকড় কিভাবে দমন করা যায় ?
A: স্প্রে করুন স্পাইরোমেসিফেন ২২.৯% SC ১ML প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন। ব্যবহার করুন ( বায়ার - ওবেরোন )
Q: পাটের গোড়া পচা হলে কি ওষুধ দেওয়া যাবে ?
A: জল নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্ত গাছের গোড়ায় স্প্রে করুন ,কার্বেন্ডাজিম ১২% + ম্যানকোজেব ৬৩% (৭৫% WP) ২.৫গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন। ব্যবহার করুন (দেহাত - Saabu ) অথবা স্প্রে করুন গাছের গোড়ায় স্প্রে করুন কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% WP ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন অথবা স্প্রে করুন থিওফানেট মিথাইল ৭০% WP ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুগ্রহ করে লগইন করুন
Get free advice from a crop doctor