पोस्ट विवरण
सुने
फल
पपीता
बागवानी
কৃষি জ্ঞান
DeHaat Channel
28 Mar
Follow

পেঁপে চাষের পদ্ধতি/Papaya cultivation technology

পেঁপে আমাদের দেশে একটি দারুণ জনপ্রিয় ফল। এটি সবজি হিসেবেও দেশের সর্বত্র সমাদৃত। পেঁপের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন পেঁপে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ না করার কারণে এর তেমন ফলন পাচ্ছেন না চাষিরা। আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ করলে ফলন দ্বিগুণ পাওয়া সম্ভব। পেঁপে একটি অতিপরিচিত সুসাধু ফল। পেঁপে গাছ লম্বা বো‍টাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। পেঁপে গাছ লম্বায় প্রায় তিন থেকে সাত ফুট হয়। প্রায় কমবেশি সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। পেঁপের কাচাঁ ফল দেখতে সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল । কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে। এটি পথ্য হিসেবে ও ব্যবহার হয়। কাঁচা পাকা দু ভাবেই পেঁপে খাওয়া যায়, তরে কাঁচা অবস্থায় সব্জি এবং পাকলে ফল।

মাটি ও জমি:

উঁচু জায়গা, নিকাশির ভাল বন্দোবস্ত আছে, সেখানে পেঁপে চাষ করতে হবে। কারণ কয়েক ঘণ্টা জল দাঁড়ানো অবস্থাও পেঁপে গাছ সহ্য করতে পারে না। বেলে দোঁয়াশ বা দোঁয়াশ মাটি ভাল। অধিক অম্ল ও অধিক ক্ষার মাটিতে পেঁপে চাষ ভাল হয় না।

জাত: ওয়াশিংটন, কুর্গ হানিডিউ, রাঁচি, সোলো-সানরাইজ, কো-২, পুসা ম্যাজেস্ট্রি, পুসা ডোয়ার্ফ প্রভৃতি।

চারা তৈরি :

পেঁপের চার বীজতলা ও পলিথিন ব্যাগে তৈরি করা যায়। বীজ থেকে চারা তৈরি করা সময় লক্ষ্য রাখতে হবে,  যাতে বীজ বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রতি হেক্টরের জন্য ১৫০-৩০০ গ্রাম বীজের দরকার। তবে হাইব্রিড পেঁপের জন্য ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম বীজই যথেষ্ট। বীজতলায় চারা তৈরির ক্ষেত্রে ১০-১৫ সেন্টিমিটার সারি করে প্রতি সারিতে ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চার তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পেঁপে বীজ বপনের ১৫ – ২০ দিন পর চারা বের হয়। এই চারা গুলো ৪০ -৫০ দিন পর তা রোপণের উপযোগী হয়।

আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ এ সফলতা পেতে বীজ বপন ও চারা লাগাবার ভাল সময়, আশ্বিন এবং পৌষ মাস। বীজ বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর অর্থাৎ মাঘ-ফাল্গুণ মাসে চারা রোপণের উপযোগী হয়। বীজ তলায় উৎপাদিত চারার উন্মুক্ত পাতাগুলো রোপণের আগে ফেলে দিলে রোপণ করা চারার মৃত্যু হার হ্রাস পায় এবং চারা দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়। পলিব্যাগে উৎপাদিত চারার ক্ষেত্রে পলিব্যাগটি খুব সাবধানে অপসারণ করতে হবে, যাতে মাটির বলটি ভেঙে না যায়। রোপণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে চারার গোড়া বীজতলা বা পলিব্যাগে মাটির যতটা গভীরে ছিল তার চেয়ে গভীরে না যায়।

চারা রোপণের  পদ্ধতি :

জমি প্রস্তুতের পর গাছ রোপনের সময় এমন গর্ত করতে হবে, যা ৪৫ সেমি. লম্বা, ৪৫ সেমি. চওড়া ও ৪৫ সেমি. গভীর হয়। গর্ত তৈরির ১৫ থেকে ২০ দিন পর গাছ রোপণের সময় গাছের সারি এমন করতে হবে, যা সারি থেকে সারির দূরত্ব ১.৮ মিটার হয় এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব যেন ১.৮ মিটার হয়। সাধারণত হেক্টর প্রতি চারার প্রয়োজন হয় প্রায় ৯ হাজার। তবে তাপমাত্রা বেশী থাকলে ১.৫ x ১.৫ মিটার দূরত্বে গাছ লাগানো প্রয়োজন। এতে প্রতি হেক্টর প্রতি চারা লাগে ১২-১৩ হাজার। তারপর বপন বা রোপণের পরপরই হালকা সেচ দিতে হবে। পড়ন্ত বিকেলে চারা রোপণের জন্য উত্তম সময়।

সার প্রয়োগ:

দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় ৪৫ সেমি করে গর্ত খুঁড়ে তাতে সার দিতে হবে। এর জন্য ১০ কেজি গোবর সার, ১ কেজি নিম খোল, ১০ গ্রাম কার্বোফিউরান ৩ জি, ২৫০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট ভাল করে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন ঢেকে রাখতে হবে। এরপর গর্তে সারমাটি মিশিয়ে দিতে হবে। সাবধানে বীজতলা থেকে মাটি সমেত চারা তুলে লাগাবেন। শিকড়ের যেন ক্ষতি না হয়।  ফল আসার লক্ষণ দেখা দিলেই গাছের চারপাশে জৈব ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, ফসফেট ২৫০ গ্রাম, পটাশ ৭৫ গ্রাম ২০ কেজি গোবর সারের সঙ্গে মিশিয়ে গাছের চারপাশে দিতে হবে। অণুখাদ্যের প্রয়োজন হলে স্প্রে করতে হবে পাতায়।

পেঁপে চাষে সেচ :

পেঁপের ভাল উৎপাদনের জন্য, মাটিতে আর্দ্রতা বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। তাই ঠাণ্ডা মৌসুমে, আমাদের ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে নিয়মিত সেচ দেওয়া উচিত। তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে ৫ থেকে ৭ দিনের ব্যবধানে সেচ দিতে হবে কারণ এই মৌসুমে পেঁপে ফসলে বেশি পরিমাণে জলের  প্রয়োজন হয়। এছাড়াও পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হলে অবশ্যই আপনাকে সেচের আধুনিক পদ্ধতি, তথা ড্রিপ কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

পরিচর্যা:

নিয়মিত জল দিতে হবে গাছে। আবার জল যাতে না দাঁড়ায়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। আগাছা যেন না হয়, আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। গোড়ার মাটি হালকা করে খুঁড়ে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। স্ত্রী ফুল বাড়াতে পেঁপে গাছের ৪-৫ মাস বয়সে ইথারেল ১ মিলি প্রতি ৪ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করলে স্ত্রী ফুল বাড়ে।

ফল সংগ্রহ :

পেঁপে ফল দুই ভাগে সংগ্রহ করা যায়। অর্থাৎ পেঁপে কাঁচা এবং পাকা দুই ভাবেই বিক্রি করা যায়। তাই যদি আমরা কাঁচা পেঁপে বিক্রি করতে চাই, তাহলে আমরা চাইলে ফল ধরার দু’মাস পরই কাঁচা হিসাবে পেঁপে ফল সংগ্রহ করতে পারি। কেননা পেঁপে গাছে ফল ধরার দু’মাস পরই পেঁপে ফলের কষ হালকা হয়ে যায়। তাই তখন এই কাঁচা পেঁপে গুলো সবজি হিসেবে বিক্রি করা যায়। এছাড়া আমরা যদি পাকা পেঁপে সংগ্রহ করতে চাই তাহলে যখনই পেঁপের গায়ের রং একটু হলুদ হয় তখনই ফল সংগ্রহ করা উচিত। এটা মনে রাখতে হবে যে, কখনোই সব গাছের সব পেঁপে কিংবা একটি গাছের সব পেঁপে একসাথে সংগ্রহ করা যায় না। তাই যখন যে ফলের রং হলুদ হয়ে আসবে, তখনই সেটি সংগ্রহ করতে হবে। আমরা যদি হালকা হলুদ অবস্থায় পেঁপে সংগ্রহ করতে পারি তাহলে, এ এটি পাকতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগবে। তবে পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতিতে সাধারণত ফল ধরার ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। কারণ এটাই তখন উপযুক্ত সময়।

পেঁপে চাষের  পর আপনাদের কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়? মন্তব্যের মাধ্যমে আপনার উত্তর আমাদের বলুন. যদি আপনি এই পোস্টে দেওয়া তথ্য পছন্দ করেন, তাহলে এই পোস্টটি লাইক করুন এবং অন্যান্য কৃষকদের সাথে শেয়ার করুন। যাতে আরও বেশি সংখ্যক কৃষক বন্ধুরা এই তথ্যের সুবিধা নিতে পারেন এবং পেঁপের  ভালো ফলন পেতে পারেন। এই ধরনের আরও তথ্যের জন্য, এখনই 'হর্টিকালচারাল ' চ্যানেল অনুসরণ করুন।

সচরাচর আপনাদের কিছু জিজ্ঞাস্য | Frequently Asked Question

Q: কোন কোন জাত চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় ?

A: ওয়াশিংটন, কুর্গ হানিডিউ, রাঁচি, সোলো-সানরাইজ, কো-২, পুসা ম্যাজেস্ট্রি, পুসা ডোয়ার্ফ প্রভৃতি।

Q: বীজ বোনার কত দিন পর চারা রোপন করা হয় ?

A: পেঁপে বীজ বপনের ১৫ – ২০ দিন পর চারা বের হয়। এই চারা গুলো ৪০ -৫০ দিন পর তা রোপণের     উপযোগী হয়।

Q: পেঁপে গাছে কি সার দেওয়া উচিত ?

A: ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, ফসফেট ২৫০ গ্রাম, পটাশ ৭৫ গ্রাম ২০ কেজি গোবর সারের সঙ্গে মিশিয়ে গাছের চারপাশে দিতে হবে।

48 Likes
Like
Comment
Share
फसल चिकित्सक से मुफ़्त सलाह पाएँ

फसल चिकित्सक से मुफ़्त सलाह पाएँ